53 - 53Shares
শাহীন মাহমুদ রাসেল॥
কক্সবাজার সদর-রামুতে কলঘর এলাকায় বাঁকখালী নদীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্লক স্থাপনের কাজে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির নজির স্থাপন করেছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গোলাম রব্বানী কনস্ট্রাকশন। কাজে অত্যন্ত নিম্ন মানের উপাদান সরবরাহ করে নয়ছয় করে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে বরাদ্দকৃত অর্থ হাতিয়ে নিতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে নদীর ভাঙ্গন রোধ এবং পাশ্ববর্তী কক্সবাজার চট্টগ্রাম মহাসড়ককে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে জরুরী ভিত্তিতে কলঘর এলাকায় এই ব্লকস্থাপনের কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কক্সবাজার। নদীর এঅংশের প্রায় ২০০ মিটার তীরব্যাপী এই কাজ চলছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। নদীর ভাঙ্গন ঠেকানো প্রধান উদ্দেশ্য হলেও এই ব্লক স্থাপনের উপর নির্ভর করছে কক্সবাজার চট্টগ্রাম মহাসড়কটিও। কারণ নদীটির তীর থেকে মাত্র ৫০মিটার দূরে অবস্থান করছে এই সড়ক। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে যেভাবে নদী ভাঙনের ঘটনা ঘটে সেই অনুপাতে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ ঝুঁকিতে পড়বে বহির্গমনের একমাত্র স্থলপথটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গেলো বছর করোনাকালীন সময়ে কাজটি শুরু করার কার্যাদেশ পায় গোলাম রব্বানী কনস্ট্রাকশন। কিন্তু করোনার কারণে কাজ বন্ধ থাকায় চলতি বছরের শুরু থেকে কাজ শুরু করে। কক্সবাজার চট্টগ্রাম মহাসড়কের দক্ষিণ পার্শ্বস্থ রামু কলঘর এলাকায় ২০০ মিটার তীর জুড়ে ব্লক স্থাপনের জন্য ব্যায় মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বলে জানা যায়। এরই মধ্যে কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে বলে নিশ্চিত করেছে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বরত ইনচার্জ মুন্না। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ- এই কাজ কোনো ভাবেই টেকসই নয়। স্থানীয়রা আরও বলছেন- ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কাজে অত্যন্ত নিম্ন মানের উপাদান সরবরাহ করেছে এবং মানা হয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক নির্দেশিত কোনো আদেশও।
সরেজমিন দেখা গেছে, তীরে ব্লক স্থাপনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। নদী থেকে নিম্ন মানের বালি উত্তোলন করে শুধুমাত্র ১ থেকে দেড় ইঞ্চি পুরো করে বালি বিছানো হয়েছে। এর উপর জিওট্যাক্স এর মোটা কাপড় বিছানো হয়েছে। তার উপর দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ ২ইঞ্চি পুরো করে ইটের নিম্ন মানের কংকর। কোথাও কোথাও শুধুমাত্র রাবিশ কিংবা সুরকি বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এভাবেই বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে ২০০ মিটার ব্লক স্থাপনের কাজ। অথচ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কক্সবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়- এখানে ৪ (চার) ইঞ্চি করে পরিষ্কার খাঁটি বালি, ৪ (চার) ইঞ্চি পুরো করে ইটের প্রথম শ্রেণির কোয়া, মাঝখানে জিওট্যাক্স এর কাপড় এবং সবার উপরে ব্লক স্থাপন করার কথা ছিলো। বাস্তবে দেখা গেছে এর কোনোটিই অনুসরণ করেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
খোঁজ নিয়ে নিয়ে জানা যায়- স্থানীয় একটি অসাধু সিন্ডিকেট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে আঁতাত করে নি¤œমানের এসব মালামাল নিতে বাধ্য করেছে। অতি মুনাফার আশায় তারা সেখানে ন্যায মূল্য আদায় করে নিয়ে নিম্ন মানের উপাদান সরবরাহ করেছে। এদের মধ্যে একজন তেচ্ছিপুলের নকল ইট কংক্রিট ব্যবসায়ী ফরিদ। তিনি এই কাজে ইটের কোয়া সরবরাহকারী হিসেবে রয়েছেন বলে দাবী করেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় ফরিদ প্রতিবেদককে ফোন দিয়ে নানা ভাবে হুমকি ধমকি ও প্রভাবিত করতে চেষ্টা করেন। তিনি দাবী করেন- তার সরবরাহকৃত ইটের কোয়া অত্যন্ত ভালো মানের। এব্যাপারে স্থানীয় মেম্বার চেয়ারম্যান সকলেই অবগত আছেন বলে তার দাবী। অথচ ঘটনাস্থলে উপস্থিত কাজটির প্রধান মেস্ত্রি মহির উদ্দিন সরবরাহকৃত ইটের কোয়াগুলো অত্যন্ত নিম্ন মানের বলে প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন।
এদিকে সাইডটিতে দায়িত্বরত পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্ধারিত কর্মকর্তা (এস.ও) জামাল মোর্শেদ বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের পক্ষে সাফাই গেয়ে প্রতিবেদককে বলেন- গোলাম রব্বানী পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের সর্বোত্তম ঠিকাদার। তিনি কোনো ভাবেই অনিয়ম করতে পারেন না। এছাড়াও গোলাম রব্বানী কাজ ও কাজে ব্যবহৃত উপাদান নিয়ে যেকোনো সময় যে কারোও সাথে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ এবং দিতে পারার মতো লোক। এমনকি স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদেরও দাবির বিরুদ্ধেও তিনি চ্যালেঞ্জে যাবেন বলে জানান তিনি।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও গ্রামবাসী ফয়েজ, আব্দুর রহিম, নাজিম উদ্দিন, কবির আহমদ ও নুরুল হক্ব প্রতিবেদকের কাছে আক্ষেপ করে বলেন- এই কাজ দিয়ে কোনো ভাবেই নদী ভাঙ্গন ঠেকানো সম্ভব নয়। কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলে তারা আরও বলেন- পানি উন্নয়ন বোর্ডের নূন্যতম নির্দেশনা মানা হলেও তাদের কোনো আপত্তি থাকতো না। কিন্তু চলমান এই কাজে সব দিক দিয়েই অনিয়ম ও দুর্নীতি হচ্ছে বলে তাদের অভিমত। প্রশ্ন তোলেন- সরবরাহকৃত উপাদানের মান নিয়েও। তারা জানিয়েছেন- ব্যবহৃত এসব ইটের কোয়া ও বালি একেবারেই নিম্ন মানের। উর্ধ্বত্বন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করে তারা আরও বলেন- এই কাজে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহিতার আওতায় এনে কাজ বুঝে না নেওয়া হলে ভবিষ্যতে উক্ত এলাকা ও পাশ্ববর্তী মহাসড়কটি চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। পরবর্তীতে একই কাজ পুণরায় কখন হতে পারে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত অপরাপর গ্রামবাসী।
এবিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী তাজুল ইসলামের বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন- কাজ প্রায় শেষের দিকে বলে জানি। তবে অনিয়মের বিষয়ে এখনও কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এখন যেহেতু জেনেছি- কালই পরিদর্শনে যাবো; কাজে কোনো ধরণের অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।